"গত কয়েক বছরের মত আজও আমরা চিন্তার পক্ষ থকে এরশাদের সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের স্মরণ করেছি। সকালে ‘শিক্ষা অধিকার চত্বর’ গিয়ে যখন পৌঁছলাম ততক্ষণে আরো অনেকেই এসে গিয়েছিলেন। গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বেশী অংশগ্রহণ দেখলাম। ভাল লাগলো। এটা ভালো লক্ষণ। ফুল দেওয়া এই প্রকার স্মরণের বাহ্যিক দিক। কিন্তু তথাকথিত ‘ভালবাসা দিবস’ যখন তারুণ্যের বিপ্লবী গৌরব ও অর্জনকে খাবলে খেয়ে ফেলতে চায় তখন তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল সেই ইতিহাসকে আবার মনে করা ও অন্যদের মনে করিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক কাজ। এই ‘তারুণ্য’চরিত্রের দিক থেকে একদমই ভিন্ন ছিল। কারণ তারা হাত বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনগুলোর আন্দোলন ও দাবিদাওয়ার দিকে। তখন ফেইসবুক বা টুইটার ছিল না, ফাল্গুণ এখনকার মতই হলুদ ছিল। সেই সময়েও হাত ধরাধরি করে ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশী বাজে, এতো পাখি গায়’ গান শোনা গিয়েছিল। ঢাকা শহর শহরের মতোই ছিল, যেখানে মফস্বলের আদল ফুটা থাকত এদিকে সেদিকে।। মধ্যবিত্ত তারুণ্যের মধ্যেমধ্যবিত্ত সুখদুঃখ ও চাওয়া পাওয়া মধ্যবিত্তের গণ্ডির মধ্যেই নিজেকে চরিতার্থ দেখতে চাইত। কিন্তু তারপরও বসন্তের মধ্যে এমন কিছু হাওয়া লেগেছিল যাকে শুধু তারুণ্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। রাজনৈতিকতার বিচার বাদ দিয়ে ‘মধ্যবিত্ত’ নামক ধারণা দিয়েও তাকে বোঝা যাবেনা। এই রাজনৈতিকতা এরশাদ শাহী ও তার হিংস্র সামরিকতন্ত্রকে শত্রু জ্ঞান করেছিল। যার সঙ্গে আপোষ চলে না। তখন ‘বসন্ত’ মিশর বা আরব দেশ থেকে আমদানি করে আনবার দরকার হয় নি। কারো হাতে সেলফোন ছিল না। চৌদ্দই ফেব্রুয়ারী বিশাল ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। বটতলা থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যেতে থাকে মিছিল। সেই সব ছবি মনের মধ্যে গেঁথে আছে। মিছিলে গুলি চালানো হয়। পুলিশের গুলি টিয়ার সেলের আঘাতে নিহত হয় জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা। বহু আহত হয়। আজ তাদের স্মরণ করবার দিন। স্মরণ করি সাংগঠনিকতা ও ঐক্যের সেই শক্তিকে যার ক্ষণিক বিস্ফার বাংলাদেশকেকাঁপিয়ে দিয়েছিল। রাজনৈতিকদলগুলো এখন কেউ হুসেইন এরশাদের মিত্র, কেউ মিত্র হবার কোশেশ করে যাচ্ছে। রাজনীতির এই বিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্যও এই দিনটি স্মরণ না করে উপায়নাই। আজ স্মরণ করি শিবলি কাইয়ুমকে যিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে হাবিবুর রহমান ও আবদুল আলীসহ গ্রেফতার হন।সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের ইতিহাস মুছে ফেলবার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে । " - ফারহাদ মাজহার
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment